দেশে প্রথমবারের মতো জামানতবিহীন ইনস্ট্যান্ট ডিজিটাল ন্যানো লোন নিয়ে এসেছে সিটি ব্যাংক, যা অ্যাপের মাধ্যমে নিতে পারবেন বিকাশ গ্রাহকরা। এই সেবার মাধ্যমে ঋণ প্রাপ্তির যোগ্যতা সাপেক্ষে গ্রাহকরা তাৎক্ষণিকভাবে বিকাশ অ্যাকাউন্টে ৫০০ থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত সিটি ব্যাংকের জামানতবিহীন ডিজিটাল ন্যানো লোন পাবেন। বার্ষিক ৯ শতাংশ সুদে ৩ কিস্তিতে বিকাশ অ্যাপ থেকেই ঋণ পরিশোধ করা যাবে।
বুধবার (১৫ ডিসেম্বর) রাজধানীর একটি হোটেলে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে ডিজিটাল এই ঋণ সেবা কার্যক্রম উদ্বোধন করেন। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আবু ফরাহ মো. নাছের ও সিটি ব্যাংকের চেয়ারম্যান আজিজ আল কায়সার। সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মাসরুর আরেফিন এবং বিকাশের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কামাল কাদীর, সিটি ব্যাংকের ডিজিটাল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস-এর প্রধান মো. জাফরুল হাসান, বিকাশ-এর চিফ কমার্শিয়াল অফিসার আলী আহম্মেদসহ উভয় প্রতিষ্ঠানের উর্দ্ধতন কর্মকর্তারাও এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, বিকাশের গ্রাহকরা অ্যাপের মাধ্যমে এই ঋণ গ্রহণ করতে পারবেন এবং অ্যাপের মাধ্যমেই পরিশোধ করা যাবে। ডিজিটাল ন্যানো লোন দেশের আর্থিক অন্তর্ভুক্তিতে একটি যুগান্তকারী সংযোজন। এর ফলে ব্যাংকিং সেবার বাইরে থাকা একটি বিশাল জনগোষ্ঠী কাগজবিহীন ডিজিটাল পদ্ধতিতে ঋণ প্রাপ্তির যোগ্যতা বিবেচনায় তাৎক্ষণিক ঋণ পাওয়ার সুযোগ পাবেন। যেকোনো স্থান থেকে যেকোনো সময় মোবাইল অ্যাপ দিয়েই একটি প্রতিষ্ঠিত বাণিজ্যিক ব্যাংকের কাছে ঋণের আবেদন করা এবং মোবাইল অ্যাপেই ঋণ পাওয়া, অপেক্ষাকৃত কম ইন্টারেস্টে ঋণ পরিশোধ ও ঋণ সম্পর্কিত তথ্য পাওয়ার সুযোগ গ্রাহককে সত্যিকার অর্থেই আর্থিক লেনদেনে আরও স্বাধীনতা ও সক্ষমতা এনে দেবে। এই উদ্যোগ বাংলাদেশ সরকারের ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ ভিশন বাস্তবায়নের পথেও একটি মাইলফলক হিসেবে কাজ করবে। গ্রাহকের বিকাশ লেনদেন এবং সিটি ব্যাংকের ক্রেডিট রিস্ক ম্যানেজমেন্ট পলিসির ওপর ভিত্তি করে ঋণ পাওয়ার উপযুক্ততা এবং ঋণের পরিমান নির্ধারিত হবে। ডিজিটাল ন্যানো লোন চালু উপলক্ষে সিটি ব্যাংক ঋণগ্রহীতাদের কাছে থেকে পরবর্তী ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত কোনো প্রসেসিং ফি নেবে না।
অনুষ্ঠানে আরও জানানো হয়, প্রযুক্তি সহায়তায় সিটি ব্যাংকের ডিজিটাল ন্যানো লোনের ক্ষেত্রে দৈনিক হারে ইন্টারেস্ট নির্ধারিত হবে। ফলে একজন ঋণগ্রহীতা মেয়াদপূর্তির আগেও ঋণ পরিশোধ করতে পারবেন এবং সেক্ষেত্রে তাকে শুধুমাত্র সেই কয়দিনের জন্যই সুদ বহন করতে হবে। অগ্রিম নিষ্পত্তির জন্যও কোনো বাড়তি খরচ হবে না। ঋণগ্রহীতাদের নোটিফিকেশনের মাধ্যমে ঋণ পরিশোধের নির্দিষ্ট তারিখ জানিয়ে দেওয়া হবে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, দেশে আমরা নতুন নতুন সেবা প্রসারে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিই। ডিজিটাল বাংলাদেশের ইতিহাসে এই লোন একটি নতুন মাইলফলকের রচনা করেছে। বিকাশ ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। বিকাশ একটি আস্থার নামে পরিণত হয়েছে। সিটি ব্যাংক সমস্যা নিয়ে পড়ে থাকেনি, সমস্যাকে সমাধানে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছে। সিটি ব্যাংক ও বিকাশের এই উদ্যোগ ডিজিটাল বাংলাদেশকে আরও এগিয়ে নেবে।
তিনি বলেন, বিকাশের অ্যাপ ব্যবহার করে প্রতিমন্ত্রী হয়েও আমি ঋণ পাইনি। কারণ বিকাশে আমার তেমন কোনো লেনদেন নেই। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স কিন্তু বলে দিয়েছে আমি ঋণ পাওয়ার ক্ষেত্রে অযোগ্য। কারণ গত তিন মাসে আমার লেনদেনের ইতিহাস পায়নি। অর্থাৎ ডিজিটাল ব্যবস্থা কিন্তু ফেয়ার সুবিধা দিচ্ছে। এই উদ্যোগ আমাদের আরও বহুদূর নিয়ে যাবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আবু ফরাহ মো. নাছের বলেন, আজকে যে ঋণ চালু হচ্ছে এর মাধ্যমে অর্থনীতির উন্নয়ন ঘটবে, উৎপাদন বাড়বে। আমরা এসএমই খাতে ঋণ দিতে ব্যাংকগুলোকে জোর দেই। সকলের উন্নয়ন হলেই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ঘটবে। ক্ষুদ্র বিষয়গুলো একত্রিত হয়েই বড় জিনিষ হয়। এই ন্যানো লোন এক সময় খাতটিতে নেতৃত্ব দিবে। আমরা চাচ্ছি প্রত্যেকটি ব্যাংক এভাবে ক্ষুদ্র ঋণ দিক।
তিনি আরও বলেন, আমরা পরিপূর্ণভাবে ডিজিটাল ব্যাংকিং সেবা চালু করতে চাই। সেজন্য নীতিমালা তৈরি করছি। ওই সেবা চালু করা সম্ভব হলে সেখানে কোন ব্যাংকের শাখা থাকবেনা, ব্যাংকের একটি নাম থাকবে, একটি অ্যাপ থাকবে, মোবাইলেই সব কিছু করা যাবে। অর্থাৎ সব কিছুই হবে ডিজিটাল কিংবা ভার্চুয়াল।
সিটি ব্যাংকের চেয়ারম্যান আজিজ আল কায়সার বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্নপূরণে আমাদের এই ‘ডিজিটাল ন্যানো লোন’ বড় ভূমিকা রাখবে। এই লোন নিতে গ্রাহকদের ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট থাকার কোনো প্রয়োজন পড়বে না। তারা নিজ নিজ বিকাশ অ্যাকাউন্টের মাধ্যমেই এই লোন নিতে ও পরিশোধ করতে পারবেন। এই লোন নেয়ার জন্যে কোনো জামানতেরও প্রয়োজন হবে না। ফলে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ের প্রসার ঘটবে।
ডিজিটাল ন্যানো লোন সেবা বাণিজ্যিকভাবে চালু করার বিষয়ে সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মাসরুর আরেফিন বলেন, আর্থিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে আপনি প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সঞ্চয়টাকে ডিপোজিট হিসেবে নেওয়ার জন্য এজেন্ট ব্যাংক খুলবেন, তাদের টাকা ট্রান্সফার করে এমএফএস ব্যবসা করবেন, কিন্তু তাদেরকে বিশ্বাস করে তাদেরকে ঋণ সুবিধা দেবেন না, সেটা তো নৈতিকভাবে ঠিক হলো না। ডিজিটাল ন্যানো লোনের যুগে সিটি ব্যাংক ও বিকাশ-এর এই পদার্পণ আমাদের ফাইন্যান্সিয়াল ইনক্লুশনের এই একটা বড় নৈতিক ঘাটতির মোচন ঘটালো।
এ প্রসঙ্গে বিকাশের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কামাল কাদীর বলেন, ‘ব্যাংক ও এমএফএসের মধ্যে আন্তঃলেনদেন সেবার কল্যাণে অনেক সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হয়েছে। বিকাশের মত কার্যকর ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ও বিশাল গ্রাহক ভিত্তিকে ব্যবহার করে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো সৃজনশীল নতুন নতুন সেবা চালু করতে পারে। এতে গ্রাহকদের কাছে আরো সহজে পৌঁছানোর সুযোগ তৈরি হবে। এই উদ্যোগ বাণিজ্যিক ব্যাংক ও বিকাশের মধ্যকার সম্পূরক ও আস্থার সম্পর্কের স্বীকৃতিস্বরূপ। ডিজিটাল ন্যানো লোন আর্থিক অন্তর্ভুক্তির সুযোগকে আরও বিস্তৃত করবে।’
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।